ঢাকা: রোহিঙ্গাদের জাতিগত সত্ত্বা মুছে ফেলতে নতুন করে ষড়যন্ত্রে মেতেছে মিয়ানমার সরকার। আর ষড়যন্ত্রটি এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে যখন দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সুচি ক্ষমতায় আছেন এবং তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি সরকার পরিচালনা করছে।
এবার ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। ফলে রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের আর ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে উল্লেখ করা যাবে না। এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের অভিহিত করতে হবে ‘ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী লোকজন’ বলে।
সম্প্রতি দেশটির তথ্য মন্ত্রণলায় থেকে ‘রোহিঙ্গা‘ শব্দ ব্যবহারের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূতের মিয়ানমার সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারে চলমান বিতর্ককে পাশ কাটানোর প্রচেষ্টা হিসেবেই এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লির মিয়ানমার সফরকালে সরকারি কর্মকর্তারা যেন রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করেন, সেটা নিশ্চিত করতে চায় দেশটি। এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ইয়াংহি লির সফরে রোহিঙ্গা বা বাঙালি শব্দগুলো ব্যবহার করা হবে না। এর বদলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ‘ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী লোকজন’ বলে উল্লেখ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ১৬ জুনে ইস্যু করা ওই চিঠিকে ‘গোপনীয়’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ওই চিঠিতে রাখাইন আদিবাসীদের ‘রাখাইন প্রদেশের বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী’ বলেও অভিহিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশেই বাস করে থাকেন। যদিও তাদের নাগরিকত্বের আবেদনের বেশিরভাগই বাতিল করে আসছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলমান এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগও জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধের কারণ হতে পারে। ওই প্রতিবেদনে আরো আশা করা হয়েছে, দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বে গঠিত নতুন সরকার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনায় বসবে। কিন্তু তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রত্যক্ষ আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ায় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো হতাশ হয়েছে। সুচি সমস্যা সঙ্কুল রাখাইন রাজ্যটিতে আস্থা প্রতিষ্ঠায় আরো ‘সময়’ চেয়েছেন।
রাখাইন প্রদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আটকে রয়েছেন। তাদের ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার অধিকার থেকেও তাদের বড় একটি অংশই বঞ্চিত।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এসব রোহিঙ্গারা প্রায়ই মৃত্যুদণ্ড, বলপ্রয়োগপূর্বক গুম, বাছবিচারহীন গ্রেপ্তার ও আটক, নির্যাতন ও জোরপূর্বক শ্রমের মতো সব ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন।
সূত্র: এপি
পাঠকের মতামত